দেশের ক্রিকেট এখন বিপিএল-জ্বরে আক্রান্ত। দুরন্ত রাজশাহীর ম্যানেজার হয়ে
সেই জ্বরের আঁচ লেগেছে তাঁর গায়েও। তবে বিপিএলের অংশ হয়েও জাতীয় দলের সাবেক
অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলছেন, দেশের ক্রিকেটে এই
টুর্নামেন্ট যেন কোনোভাবেই অগ্রাধিকার না পায়
দুরন্ত রাজশাহীর ম্যানেজার আপনি। দলের সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততা কী রকম হবে?
ফারুক আহমেদ: ক্রিকেট-বিষয়ক সম্পৃক্ততাই থাকবে। দলের সুযোগ-সুবিধা দেখার
জন্য আলাদা লোক থাকবে। আমার কাজটা হবে শুধুই ক্রিকেটিং। খেলোয়াড় কেনা থেকে
শুরু করে দল নির্বাচন, কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা—সবকিছুতেই সম্পৃক্ত
থাকব। এ ধরনের কাজ করে তৃপ্তিও পাই, সঙ্গে আর্থিক ব্যাপার তো আছেই।
বিপিএল বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নতুন একটা ধারণা। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
ফারুক: আমরা সব সময়ই অগ্রাধিকার ঠিক করার কথা বলি। যতটুকু সম্পদই আছে,
সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা।্রকিন্তু আমরা যেটা চাই, সেটা সব সময় হয় না।
বিপিএল কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বলছে, দেশের ক্রিকেটকে এটা বড় একটা আর্থিক
সমর্থন দেবে। ক্রিকেট বোর্ড ধনী হবে এবং এই টাকা ক্রিকেটের উন্নয়নে ব্যয়
করা হবে। যদি আমরা এটা নিশ্চিত করতে পারি, টুর্নামেন্টটা আমাদের ক্রিকেটে
ইতিবাচক প্রভাবই ফেলবে।
দেশের একমাত্র প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট টুর্নামেন্টটিই ঠিকভাবে হয় না। এর
মধ্যে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিপিএল আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হবে না তো?
ফারুক: টি-টোয়েন্টি সময়ের দাবি। ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার জন্য এই ফরম্যাটটা
খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সময়ে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের দিকেও মনোযোগ
দিতে হবে। কারণ, ওটাই আমাদের ক্রিকেটকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। আগেও
বলেছি, এখনো বলি, এটা নিয়ে বোর্ডের ভাবাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
কোনটা আগে হওয়া উচিত ছিল—বিপিএলের মতো একটা অলংকারিক টুর্নামেন্ট, নাকি দেশের ক্রিকেটের ভিত ঠিক করা?
ফারুক: আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি, বিপিএলের আগে চার দিনের ক্রিকেটটাকে ঠিক
করা উচিত ছিল। আমরা জানি, স্পনসর নেই, কেউ আসতে চায় না। কিন্তু বোর্ড যদি
ক্রিকেটের উন্নতি চায়, যে কাজটা হলে দেশের ক্রিকেটের ভালো হবে, সে কাজটা
করতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে না কেন? আমি মনে করি, প্রথম শ্রেণীর
ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দিয়েই অন্য সব করতে হবে। তবে দর্শক বিনোদন এবং আর্থিক
বিষয়গুলো চিন্তা করে বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টেরও প্রয়োজন আছে।
কিন্তু বোর্ড তো বরাবরই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের প্রতি উদাসীন। এর সমাধান কী?
ফারুক: আগেই বলেছি, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। আমি বিপিএলের বিরোধী
নই। তবে বিসিবির উচিত, এফটিপি দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় লিগের
ম্যাচগুলো আয়োজন করা। সবকিছু ঠিক করে বিপিএল শুরু করলে আমরা হয়তো আরও
পাঁচ-ছয় বছর পিছিয়ে যেতাম। শুরু যখন হয়েছে, বিপিএল চলুক। কিন্তু আমি আশা
করব, এই টুর্নামেন্টটা যেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার
না পায়।
দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটকে চাঙা করতে আপনার কোনো পরামর্শ?
ফারুক: আমি মনে করি, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটই সব সমস্যার সমাধান। একটা ছেলে
দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলেই তৈরি হয়। যে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট ভালো খেলে,
সে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবই ভালো খেলবে। কারণ, সবচেয়ে কঠিন হলো দীর্ঘ
পরিসরের ক্রিকেট।
No comments:
Post a Comment